প্রদীপ চট্টোপাধ্যায় ( বর্ধমান ) : স্কুল সার্ভিস কমিশনের মৌখিক পরীক্ষায় পাশ করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ৭ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে চাকরি প্রার্থীর সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠলো বর্ধমানের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা ও নেত্রীর বিরুদ্ধে । প্রতারণার সবিস্তার উল্লেখ করে প্রতারিত যুবক অতনু রায় বর্ধমান আদালতে তৃণমূল নেতা উত্তম সেনগুপ্ত এবং তাঁর স্ত্রী শিখা দত্ত (সেনগুপ্ত ) ও তাঁদের এজেন্ট অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সেই মামলা গ্রহন করে বর্ধমান থানার আই সি কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন ।বিধানসভা ভোটের মুখে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজনৈতিক মহলে । অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের দাবিতে স্বোচ্চার হয়েছে বিরোধী নেতৃত্ব ।
বর্ধমান সিজেএম আদালত মামলাকারী যুবক
অতনু রায়ের বাড়ি পূর্ব বর্ধমানের মেমারি থানার পাহাড়হাটী গ্রামে।আইনজীবী সদন তা -র মাধ্যমে প্রতারিত অতনু রায় শনিবার প্রতারণার একাধীক ধারায় আদালতে মামলা রুজু করেন। আইনজীবী সদন তা রবিবার জানিয়েছেন,তাঁর মক্কেলের আনা অভিযোগের
সারবত্তা রয়েছে । প্রতারণার বেশকিছু তথ্য প্রমানও রয়েছে তাঁর মক্কেল অতনু রায়ের কাছে। সেই সবের ভিত্তিতে দন্ড বিধি আইনের ৪২০,৪৭৬,৪৬৮,৪৭১ ও ৩৪ ধারা মতে তিনি কোকর্দমা দাখিল করেছেন । যাদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে তারা সকলেই বর্ধমান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার বাসিন্দা।
সিজেএম মামলা গ্রহন করে বর্ধমান থানার আই সি কে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে আইনজীবি সদন তা জানিয়েছেন । মামলাকারী অতনু রায় আদলকে জানিয়েছেন , তিনি একজন শিক্ষিত বেকার যুবক এবং বি,পি,এড পাশও করেছেন । অতনু দাবি করেছেন তিনিও তৃণমূল কংগ্রেস দলের একজন একজন কর্মী । ২০১৭ সালে হওয়া স্কুল সার্ভিস কমিশন আয়োজিত ফিজিক্যাল এডুকেশনের লিখিত পরীক্ষায় তিনি পাশ করেন । তা জানতে পেরে ২০১৮ সালে পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা জেলাপরিষদের বর্তমান পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ উত্তম সেনগুপ্ত তাকে বলেন, ৭ লক্ষ টাকা ঘুস দিলে তিনি স্কুল সার্ভিস কমিশনের ইন্টারভিউয়ে পাশ করিয়ে দেবেন । অতনু জানিয়েছে এরপর একদিন উত্তম সেনগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী শিখাদেবীর এজেন্ট অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বলে“ উত্তম কাবু বলেছে ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিলের মধ্যে ৭ লক্ষ টাকা দিতে হবে । অয়ন জানিয়েছেন ,উত্তম সেনগুপ্ত জেলার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা এবং তার স্ত্রী শিখাদেবী জেলার মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসে সভানেত্রী।পাশাপাশি তিনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বোটানি’ বিভাগের ‘হেড অফ দি ডিপার্টমেন্ট’। অতনুর অভিযোগ তিনি উত্তম সেনগুপ্তর কথা সরল মনে বিশ্বাস করে বিভিন্ন শুভানুধ্যায়ীদের কাছ থেকে নগদ টাকা ধার করেন এবং বাড়িতে থাকা সোনার গহনা বিক্রি করে ৭ লক্ষ টাকা জোগাড় করেন । ২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল সকালে এজেন্ট অয়নের সঙ্গে তিনি উত্তম সেনগুপ্তর বাড়িতে যান। সেখানেই উত্তম সেনগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী শিখাদেবীর হাতে ৭ লক্ষ টাকা তুলেদেন। কিন্তু পরবর্তি সময়ে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ফাইনাল রেজাল্ট বের হলে অতনু দেখেন প্রকাশিত রেজাল্টে তার নাম নেই । এরপর হতাশ হয়েপড়ে উত্তম সেনগুপ্ত ,শিখাদেবী ও তাঁদের এজেন্ট অয়নের কাছে অতনু ৭ লক্ষ টাকা ফেরৎ চাইতে শুরু করেন । তাতে বিড়ম্বনায় পড়ে গিয়ে এজেন্ট অয়ন ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি সকালে অতনুকে উত্তম সেনগুপ্তর বাড়িতে নিয়ে যান ।উত্তম বাবু ও তাঁর স্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী শিখাদেবী ওইদিন অতনুকে শিক্ষা বিভাগের এস,আই অফিসে কম্পিউটার ডাটা এন্ট্রি বিভাগের অস্থায়ী কর্মচারী হিসাবে একটি নিয়োগপত্র দেন।সন্দেহ হওয়ায় নিয়োগপত্রটি যাচাই করে অতনু জানতে পারেন নিয়োগপত্রটি জাল । এমন জাল নিয়োগপত্র দেওয়ার জন্য অতনু ফের উত্তম সেনগুপ্তর বাড়িতে গিয়ে চোঁচামেচি করে ৭ লক্ষ টাকা ফেরৎতের দাবি করে।তখন উত্তম সেনগুপ্ত জাল নিয়োগপত্রটি ফেরৎ চাইলেও অতনু সেটি তাকে ফেরৎ না দিয়ে নিজের কাছেই রেখে দেন । পাাশাপাশি অতনু প্রতিনিয়ত উত্তম সেনগুপ্ত এবং তাঁর স্ত্রীর ও এজেন্টের কাছে ৭ লক্ষ টাকা ফেরৎতের দাবি জানিয়ে চলে । অতনুর তাগাদার বহর বেড়ে চলায় ২০১৯ সালের ১০ জুলাই উত্তম সেনগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী নিজেরা স্বাক্ষর করে অতনুর হাতে তিন লক্ষটাকার চেক ( বর্ধমানের স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার )তুলেদেন । অতনু তার নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সেই চেকটি জমা দিলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়’ ফান্ড ইনসাফিসিয়েন্ট’ । অতনুর অভিযোগ , এর পর থেকে বহুবার তিনি তৃণমূল নেতা উত্তম সেনগুপ্ত ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের এজেন্টের কাছে ৭ লক্ষ টাকা ফেরৎ চেয়েও পান নি । জেলা তৃণমূলের অন্য উচ্চ পদাধিকারী নেতারও দ্বারস্থ হয়েছিলে। এমনকি জেলার পুলিশ সুপারের কাছেও অভিযোগ জানিয়ে ছিলেন । কিন্তু কোন জায়গা থেকেই সুরাহা না মেলায় তিনি উত্তম সেনগুপ্ত ছাড়াও তাঁর স্ত্রী শিখাদেবী ও তাঁদের এজেন্ট অয়ন বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বর্ধমান আদালতে মামলা রুজু করেছেন। মামলাকারী আদালতকে আরো জানিয়েছে, চাকরির টোপ দিয়ে এই তিন অভিযুক্ত শুধু তার সঙ্গেই প্রতারণা করেনি । অভিযুক্ততরা কয়েক শত বেকার যুবক যুবতীর সঙ্গেও প্রতারণা করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে । টাকা ফেরৎ না পেলে আত্মহত্যা করা ছাড়া তাঁর আরকোন উপায় থাকবে না বলে অতনু রায় এদিন জানিয়েছেন । তৃণমূল নেতা উত্তম সেনগুপ্ত অবশ্য যথারীতি অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি এদিন বলেন , “সব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ । ভোটের আগে তৃণমূলকে ’ম্যালাইন’ করতে পরিকল্পনা করে এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে। অভিযোগকারী নিজেকে তৃণমূল কর্মী বলে যে দাবি করেছে তার প্রসঙ্গে উত্তম সেনগুপ্তর সাফাই তৃণমূলের মিটিং মিছিলে যে কেউ যোগ দিতে পারে । তাতে কিছু যায় আসে না । “ অন্যদিকে জেলা বিজেপি সভাপতি সন্দীপ নন্দি বলেন ,“ফেঁসে গেলেই তৃণমূলের নেতারা বিরোধীদের চক্রান্ত বলে পার পেতে চান । পুলিশ সঠিক তদন্ত করলেই প্রতারণার পর্দা ফাঁস হয়ে যাবে । তবে পুলিশ সঠিক তদন্ত করে কিনা সেটাই এখন দেখার । “